বাঁশির সুরে বাজে জীবনের জয়গান
বাঁশি শুনে আর কাজ নাই
সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি…..
এই বাঁশির সুরের মুর্ছনা তোলা এক গুণী মানুষের কথা বলব আজ যে তার জীবনের প্রতিটা মূর্হত ব্যয় করেছে বাঁশি আর সুরের সাধনায়।
আপাতদৃষ্টিতে বাঁশি দেখলে মনে হবে বাঁশের তৈরি নির্দিষ্ট আয়তনে কতগুলো ছিদ্রের সমাহারে একটি বাদ্যযন্ত্র। অথচ এর মধ্যে রয়েছে সামঞ্জস্য আর পরিমিতির অনন্যতা।
সেই পরিমিতি মেনেই একজন কমল চন্দ্র সরকার সৃষ্টি করে চলেছেন বাঁশের বাঁশি। যিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন সৃষ্টির অনবদ্য এক পথে। কত মানুষ তার বাঁশি বাজিয়েছেন, কতবার নিজে বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেছেন তার হিসাব মেলানো কঠিন। সৃজনশীল আনন্দে পরিপূর্ণ এ বাদ্যযন্ত্র শিল্পী জীবনের প্রায় শেষ বয়সে এসে পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্প পুরস্কার।
কমল চন্দ্র সরকারের জন্ম ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কুমিরাদহ গ্রামে। খুব ছোটবেলা থেকেই সুর তাকে পেয়ে বসে। ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাসের পর আর লেখাপড়া করেন নি। যাননি কোন চাকরিতেও।
দেশ স্বাধীনের সময় ভারতে চলে যান। সেখানে কলকাতার ভাটপাড়ায় নিরঞ্জন কুমার বিশ্বাস নামে এক বাঁশিওয়ালার কাছ থেকে বাঁশি তৈরির কাজ শেখেন সূচারুরুপে এবং নেন সুরের ওপর প্রশিক্ষণ । ৬ মাস সেখানে থাকার পর চলে আসেন নিজ দেশে।
৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত সুরই তাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। রেখেছে বাঁশির মায়াজালে বন্দী করে। দুই ছেলে, দুই মেয়ের অভাব-অনটনের সংসারেও তার শিল্পনৈপুণ্যে প্রকৃতির বাঁশ হয়ে উঠেছে শিল্পিত বাঁশরি। শুধু বাঁশি তৈরি করেই ক্ষান্ত নন তিনি, বাজান নিজেও।
কুমিরাদহ গ্রামে কমল চন্দ্র সরকারের প্রতিবেশী কলেজছাত্রী বিচিত্রা দাস জানান, তার বাঁশির সুরে জাদু আছে। বেতার এবং টিভির বিভিন্ন শিল্পী প্রত্যন্ত পল্লী কুমিরাদহ গ্রামে এসে কমল চন্দ্র সরকারের কাছে থেকে বাঁশি কেনেন। অসামান্য সুরের অধিকারী কমল চন্দ্র সরকারের স্ত্রী কাত্যয়নী সরকার জানান, বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে এসে স্বামীকে দেখেছেন বাঁশি তৈরি করতে ও বাজাতে। তিনি তার স্বামীকে বাঁশিতে রঙ করাসহ হাতের কাজগুলোতে সহযোগিতা করেন সব সময়। কাজের প্রতি দেন উৎসাহ।
কমল চন্দ্র সরকার জানান, বিভিন্ন এলাকায় ছোটবেলা থেকে গান-বাজনা দেখে ও শুনে তিনি বাঁশিতে আকৃষ্ট হন। নানা অভাব-অনটনের পরও বাঁশি তৈরি আর সুরের মূর্ছনা ছাড়তে পারেননি তিনি।
প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ